তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সূচনাপর্ব, অর্থাৎ ৫ জুন থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত সময়কালটি ছিল মেটিকুলাসলি ডিজাইনড বা সুপরিকল্পিত। এ সময়ই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও নেতৃত্ব তৈরি হয়, যা ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে ছাত্র-জনতার বিপ্লবী অংশগ্রহণে সফলতায় পৌঁছে।
শুক্রবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘দুনিয়ার কোনো অভ্যুত্থান বা বিপ্লব পরিকল্পনা না করে হয়েছে? জনগণের চৈতন্যকে ঐক্যবদ্ধ ও লক্ষ্যাভিমুখী রাখতে মেটিকুলাস ডিজাইনের বিকল্প নেই। যখন জনগণ নেতৃত্ব ও বক্তব্য পেয়ে যাবে এবং বিপ্লবের অবজেক্টিভ কন্ডিশন প্রস্তুত, তখন আর প্ল্যানের দরকার পড়ে না। কিন্তু, তার আগে রাজনৈতিকভাবে জনগণকে প্রস্তুত এবং বিপ্লবী করে তোলা মেটিকুলাস ডিজাইন হলে সমস্যা কোথায়?’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সিরাজুল আলম খান, তাজউদ্দিন, সিরাজ শিকদার আর ভাসানী, এমনকি খোদ শেখ মুজিব যদি পাকিস্তানকে পরাজিত করতে মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ হয়ে পাপবোধ না করেন এবং আমরা তাদের নিয়ে (তাদের ভুলসহই, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য) গর্বিত হতে পারি, তাহলে ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে মেটিকুলাস ডিজাইন করে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করলে কেন এ প্রজন্ম গর্বিত বোধ করবে না?’

মাহফুজ আলম বলেন, ‘৩ তারিখের ১ দফা ঘোষণার আগে জাতিসংঘের বক্তব্য ছাড়া বিদেশি শক্তি বা সামরিক বাহিনী কারোরই বিন্দুমাত্র অংশগ্রহণ ছিল না এ গণ-অভ্যুত্থানে। ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে (যা ন্যায্য বলেই আমরা মনে করি) আগরতলা বৈঠক থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য শেখ মুজিব ও অন্য জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি যদি আমাদের শ্রদ্ধা থাকে, তাহলে কোনো বিদেশি শক্তি বা তৃতীয় শক্তির সঙ্গে ষড়যন্ত্র কিংবা সলা-পরামর্শ ছাড়াই জনগণের অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলার জন্য অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ এবং অংশীজনকে কেন গালি শুনতে হবে?’
তিনি বলেন, ‘পুনশ্চ : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দুটি অংশ। ৫ জুন থেকে ১৮ জুলাই। এ অংশে অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট এবং নেতৃত্ব তৈরি করেছিল। আর ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব স্তরের ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে এবং আত্মদানে অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। প্রথম অংশ অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড। পরের অংশের কৃতিত্ব বিপ্লবী ছাত্র-জনতার। কিন্তু, অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না থাকলে এ বিপ্লবী জনতা পরের অংশে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারত না। শুক্রবার দিবাগত রাত, ২ আগস্টে এ অভ্যুত্থান বেহাত হয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের দিকে মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তা ঠেকাতে পেরেছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ নির্দেশনা ও বক্তব্যের অবদানটুকু বাদে ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিদ্রোহ, প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ আর বিপ্লবী তৎপরতার কৃতিত্ব সব স্তরের ছাত্র-জনতার। উপরের এ ব্যখ্যা মওলানা ভাসানীর ’৬৮ সালের ঘেরাও আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ মিলিয়ে দেখেন, অথবা ’৭১ এর মার্চ। আপনারা মেটিকুলাস ডিজাইন ও বুঝতে পারবেন এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ, প্রতিরোধ আর বিপ্লবী তৎপরতারও হদিস পাবেন।’