ঢাকা | মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫,৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চিকেন নেকে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বসাল ভারত

ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে উত্তপ্ত উপমহাদেশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভয়ে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে কেন্দ্র। হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশকে হারিয়েছে। পাকিস্তানের অনেকটাই কাছাকাছি এখন বাংলাদেশ।

এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি করিডোর বা ‘চিকেন নেক’ অঞ্চলে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারণ এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যকে (সেভেন সিস্টারস) মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে এবং এই করিডোরটি বিভিন্ন দেশের জন্য একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ । বিশেষ করে এই অঞ্চলে নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান এবং চীন-তিব্বতের সীমান্ত অবস্থিত, যা এটিকে একটি সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর এলাকা করে তুলেছে।

এই কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে— ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা (যেমন এস-৪০০) মোতায়েন। এটি মোতায়েন করা হয়েছে আকাশ থেকে আসা বিপদ মোকাবিলার জন্য।

সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং সতর্ক অবস্থা জারি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করছে।

একদম যুদ্ধের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান। ভারতীয় মিডিয়ায় শুধু পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতি দেখানো হলেও বিবিসি, আলজাজিরা, রয়টার্সের মতো আন্তর্জাতিক মিডিয়া দেখে খবর পাওয়া যাচ্ছে, ভারতকে রীতিমতো দাঁতভাঙা জবাব দিচ্ছে পাক সেনাবাহিনী। গোলাগুলির শব্দে কাঁপছে সীমান্ত। ইতিমধ্যে তারা ৫০ ভারতীয় সেনা হত্যা করার দাবিও করেছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’—এরপর এখন যে কোনোভাবে ভারতের ক্ষতি করতে মরিয়া পাকিস্তান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তগুলোতে এখন নিরাপত্তার কড়াকড়ি। চূড়ান্ত সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন নেকেও। চিকেনস নেকের ওপর সব সময়ই নজর থাকে চিনের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের সঙ্গে আবার পাকিস্তানের সম্পর্কও যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। ফলে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে ভারতে হামলা করতে এখানে নজরদারি বাড়াতে পারে চীন। সে কথা মাথায় রেখে এখন চিকেনস নেকের দিকে বাড়তি নজর রেখেছে ভারত। প্রয়োজন পড়লেই যাতে ব্যবহার করা যায়, তাই তৈরি রাখা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। আশপাশের গ্রামগুলোতে যাতে বাইরের কেউ সহজে ঢুকতে না পারে, বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।

গ্রামবাসীদের সঙ্গেও লাগাতার যোগাযোগ রেখে চলেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তৈরি রয়েছে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও।

চিকেন নেকের কাছাকাছি এলাকা চোপড়ার বাসিন্দা মইদুল ইসলাম জানান, গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিএসএফ কথা বলছে। কোন গ্রামে কে আসছে খবর রাখছে। বাংলাদেশের বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না তার ওপর কড়া নজর রাখছে গোয়েন্দারা।

বাংলাদেশি গাড়িচালক সিকন্দর বলেন, আগে জাল লাইসেন্স নিয়ে অনেকে আসত। এখন ছয়বার করে চেক হয়। কাশ্মীরের ঘটনার পর কড়াকড়ি। বাইরে থেকে আগে সীমান্তের গ্রামে কেউ যাতে না আসতে পারে, তাই এমন কড়া নজর। ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবকের করোনেশন ব্রিজ। এখান থেকে একদিকে কালিম্পং থেকে সিকিম হয়ে চীনে ঢোকার রাস্তা। আরেক দিকে জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার হয়ে ভুটান।

পুলিশের কড়াকড়িও বেড়েছে। এক পুলিশকর্মী বলেন, রাত করেও থাকছি এখন। আগে এত পাহারা ছিল না। ভারত-নেপাল সীমান্ত পানি ট্যাংকিতে সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারেন। এখন নেপালের নাগরিক ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

সামগ্রিকভাবেও দেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এখন আঁটসাঁট নিরাপত্তা। সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও ডিজির সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে বাংলাদেশকে কেন এত ভয় পাচ্ছে ভারত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। তবে কি বাংলাদেশকে আর বন্ধু ভাবতে পারছে না মোদি সরকার!