গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুই শিক্ষার্থীসহ ৭ তরুণ-তরুণী হত্যার শিকার হয়েছেন। হত্যার শিকার হওয়া এসব তরুণ-তরুণী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এসব হত্যার ধরণ দেখে প্রশ্ন উঠেছে এসব ঘটনা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি নিছক দুর্ঘটনা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া জসিম উদ্দিন। তিনি বুধবার ট্টগ্রামে মহানগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। জসিম উদ্দিনকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে দাবি করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে স্বজন ও স্থানীয়রা।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহানকে (২৬) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি উপজেলার মৌচাক জামতলা এলাকার তানভির হোসেন নান্নু মিয়ার ছেলে। চাকরি করতেন উত্তরার একটি কল সেন্টারে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
এদিকে, মঙ্গলবার কলেজছাত্রী সুজানার পর নারায়ণগঞ্জের পূর্বাঞ্চলে একই লেক থেকে তার বন্ধু শাহিনুর রহমান কাব্যের লাশও আজ বুধবার উদ্ধার করা হয়েছে। সুজানার মরদেহ উদ্ধারের ১৫ ঘণ্টা পর আজ বুধবার সকালে ১৬ বছর বয়সী কাব্যের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। নিহত শাহিনুর রহমান কাব্য কাফরুল থানার কচুক্ষেত বউ বাজার এলাকার হারুনুর রশিদের ছেলে। সে রাজধানীর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র নারায়ণঞ্জের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছিলেন। ঘটনার দুই দিনর পর গতকাল শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সীমান্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। সীমান্তের বাবা আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সীমান্তকে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয়রা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। তার শরীরে বেশ কয়েকটি জখম ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, আমরা দেখেছি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ধানমন্ডি ৩২-সহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। আমরা এখানে কাঁদতে আসি নাই। আমরা এখানে ফাঁসির দাবিতে এসেছি। আব্দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমাদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব। গুপ্তহত্যা করে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বকর মজুমদার বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর, ১৪ ডিসেম্বর ৩ জন ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাকের মজুমদার আরও বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই, অপরাধীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করুন। রাজধানীসহ সারা দেশে টহল জোরদার করুন, যাতে আর কোনো মা-বাবার সন্তান এভাবে প্রাণ না হারান।’