ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫,৩ মাঘ ১৪৩১

৭১ আমাদের, ২৪-ও আমাদের

আরও একটা বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করছে বাংলাদেশিরা। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে আমাদের যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে তা সব জাতির নেই। ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দুই জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ হলেও এই অঞ্চলের মানুষ নিজেদের একটা দেশ পাওয়ার স্বপ্ন দেখে, যা উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলেরই অধরা স্বপ্ন রয়ে গেছে। সেই দেশ আমরা পেয়েছি এক দারুণ জনযুদ্ধে।

এই জনপদের বেশিরভাগ মানুষ এক হয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনে দেশ স্বাধীন করেছিল। তবে সেই বিজয় বেহাত হয়ে গিয়েছিল ক্ষমতালিপ্সুদের লোভ আর অসততায়। শুধু বেহাতই নয়, জনযুদ্ধকে কেবল দলীয় সম্পদ বলে প্রচারণা চলেছে অর্ধ শতক ধরে।

যেই দলটি এই প্রচারণা চালায়, সেই আওয়ামী লীগই আবার এই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ ও জঘন্য স্বৈরশাসন চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করেও প্রকারান্তরে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিয়ে ক্ষমতা নিশ্চিত করেছিল দলটি।

দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে, দেশের সম্পদ লুটে, দেশ-বিদেশে বিপুল ক্ষমতা অর্জন করলেও দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে অবশ্য দমিয়ে রাখতে পারে নাই হাসিনাশাহী। যেই দেশের মানুষকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি জান্তা হারাতে পারে নাই তাঁদের বিরুদ্ধে হাসিনাও টিকতে পারে নাই।

হাসিনার টিকে থাকার একটা বড় যুক্তি ছিল মুক্তিযুদ্ধের বয়ান। যেই বয়ানে এই দেশের মানুষকে নাই করে দিয়ে কেবল নিজ দল আর পিতার অবদানকে বড় করে দেখানো হতো। সেই কারণে, হাসিনার পতন মানে আসলে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব দেশের মানুষের কাছে ফিরে আসা।

অথচ, ২০২৪ সালের দারুণ অর্জনকে সামনে রেখে কেউ কেউ ৭১ সালের অর্জনকে খাটো করতে চাইছে। ঠিক যেই রাজনীতিটা আওয়ামী লীগ করতো। বিভাজনের আর ট্যাগ দেগে দেওয়ার।

অথচ, বাংলাদেশের মানুষ দুইবারই বিজয়ী। কিন্তু, এইবার যাতে কোনোভাবেই এইসব বিভাজনকারীদের ফাঁদে পড়ে দেশের মানুষের অর্জন বেহাত না হয় তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আর বাংলাদেশকে সামনের দিকে আগাতে হবে।

আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। দেশের মানুষের বৈষম্য দূর করার রাজনীতি করতে হবে, যাতে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ স্বাধীন দেশের সুফল পায়। দেশের মানুষ যাতে গণতন্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

এর জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে ১৯৭১ আর ২০২৪।