ঢাকা | বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫,৩১ আশ্বিন ১৪৩২

আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে-ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিভর করছে।

তিনি বলেন, এই সময়টাতে অত্যন্ত সাবধানে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। আমাদের ভুলের কারণে বা রাজনৈতিক কোন ভুল প্রদক্ষেপের কারণে আমরা যেন আবার ফ্যাসিস্টদের নির্যাতনের কবলে না পড়ি। অর্থাৎ ফ্যাসিস্টদেরকে আমরা আর ফেরৎ দেখতে চাই না।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর ৩টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আয়োজিত সদর উপজেলা বিএনপি ও রুহিয়া থানা বিএনপির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন- বিএনপি সামগ্রিক ভাবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ ৬ বছর কারাগারে আটক করা হয়েছিল, আমাদের প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নেতা ইলিয়াসসহ ১৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোন চিহ্ন আমরা খুঁজে পাইনি। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে তাকেও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তিনি এখনো দেশে ফিরে আসতে পারেনি।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আবার গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থায় ফিরে আসতে চাই। আমাদের মানুষ নির্বাচন চয়, তারা ১৫-১৬ বছর যে ভোট দিতে পারেনি তাই আবার তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। নিজস্ব সরকার তৈরি করতে চায় এবং সেই পার্লামেন্টে ও সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আবার সচল করে একটা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চায়।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের যারা সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই অমতপোষন করেছেন এটা হতেই পারে। তারজন্য সেটাকে লক্ষ্য করে ও কেন্দ্র করে আবার আন্দোলন করা রাস্তায় এটা কোনমতইে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ যে দাবিগুলো তারা তুলছেন সেই দাবিগুলো নির্বাচনের পরে যে পার্লামেন্ট গঠন হবে সেই পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি- সংস্কার আমরা চাই এবং সংস্কারগুলোর শুরু আমরাই করেছিলাম।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের উত্তোরণের যে পরীক্ষা, সেই পরীক্ষার আমাদেরকে উত্তীর্ণ হতে হবে। আমাদের সমস্ত বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্রই হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যে ব্যবস্থায় সবধরনের মানুষের বিকাশের সুযোগ করে দেয়। সকল মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে, পার্লামেন্টের নিজের কথা বলার সুযোগ থাকে, পত্র-পত্রিকায় নিজেরা কথা বলতে পারেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং একি ভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়। এছাড়াও একি ভাবে আমরা আমাদের যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থাকের গণতান্ত্রিক করণের মধ্য দিয়ে আমরা আরও অনেক উন্নত করতে পারি।

ফখরুল বলেন, আমি আমরা সংবাদকর্মী ভাইদের একটাই অনুরোধ জানাবো- আপনারা রাষ্ট্রের একটা অন্যতম স্তম্ভ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেট একটা খুঁটি হচ্ছে গণমাধ্যম। আপনাদের বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এবং বস্তুনিষ্ট সমালোচনার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র টিকে থাকে। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের নিয়ম এবং সেখানেই গণতন্ত্রের সাফল্য। আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের সংবাদমাধ্যমের কাছে- শুধুমাত্র চটকদার বা বেশি বিক্রি হবে এ ধরনের সংবাদ ছাপিয়ে আমরা যেন মুল জায়গা থেকে সরে না যাই।

তিনি বলেন, আরেকটি বড় মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া, এখানে অনেক ধরনের অপপ্রচার হয়, এখানে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেককিছু প্রচার করা হয়, যা সত্য নয়। সেগুলোকে বাছাই করে রাজনৈতিক কর্মীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং গণতন্ত্রনের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন; সেইভাবে আমরা কাজ করছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সঙ্গে যারা লড়াই-সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রে ফিরে আসার জন্য, সেসমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রাখছি এবং আশা করছি সবাই মিলে এই গণতন্ত্রকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।

তিনি বলেন, আগামী ১৭ তারিখে অর্থাৎ শুক্রবারে সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে একটা সনদ প্রকাশিত হবে।