ঢাকা | শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫,৬ আষাঢ় ১৪৩২

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে সিটি করপোরেশনের অভিযান

ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে টিএসসি-সংলগ্ন ফটক এলাকা দিয়ে এই অভিযান শুরু হয় এবং তা এখনো চলছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা। এ সময় পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও সঙ্গ দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার গভীর রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তারই অংশ হিসেবে এই উচ্ছেদ অভিযান।

সকাল থেকে দেখা যায়, একাধিক বুলডোজার দিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পুলিশের সহায়তায় দ্রুতগতিতে চলছে অভিযান।

তবে ক্ষুব্ধ দোকানিরা বলছেন, তারা অপরাধ করেননি — অথচ তাদের জীবিকা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দোকানি রনি মিয়া বলেন, “অপরাধ করেছে অন্য কেউ, অথচ ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। এই দোকান দিয়েই সংসার চলে।”

অভিযানের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম বলেন, “এই উদ্যান জাতীয় পর্যায়ের একটি জায়গা, এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ বেড়াতে আসেন। তাদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই আমরা যৌথভাবে এই অভিযান চালাচ্ছি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও অভিযানকে সমর্থন জানানো হয়েছে। এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বলেন, “আমরা চাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হোক একটি নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন স্থান। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার।”

শাহরিয়ার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য সম্পাদক। তার মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের দাবি জানায়।

এর জেরে বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈঠকে ৭টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:

১. টিএসসি-সংলগ্ন ফটকটি স্থায়ীভাবে বন্ধ থাকবে।

২. অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক বন্ধ এবং পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় যৌথ অভিযান চলবে।

৩. নিয়মিত নজরদারির জন্য কমিটি গঠন হবে।

৪. উদ্যানে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি বসানো ও মনিটরিং চালু করা হবে।

৫. উদ্যানে একটি আলাদা পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে।

৬. রমনা পার্কের মতো নিয়মশৃঙ্খলা চালু করা হবে।

৭. রাত ৮টার পর সাধারণ মানুষ উদ্যানে ঢুকতে পারবে না।

এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর হলে উদ্যান হবে নিরাপদ, সুন্দর ও সাধারণ মানুষের জন্য উপযুক্ত বিনোদনকেন্দ্র — এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।