ঢাকা | রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫,১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ছাত্রদলের গোপালগঞ্জ জয় ছিল চ্যালেঞ্জিং: ইব্রাহিম খলিল ফিরোজ

আজ (বুধবার) গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক হামলা করে আওয়ামী লীগ, যুগলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ইব্রাহিম খলিল ফিরোজ আজ ফেসবুকে সাম্প্রতি গোপালগঞ্জে তার সাংগঠনিক সফরের চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি পোস্ট দেন।

তিনি লিখেন, ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অক্টোবরের প্রথম দিকে আমাকে গোপালগঞ্জ শরিয়তপুর এবং মাদারীপুর জেলার ছাত্রদলের সাংগঠনিক টিম প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমরা মাদারীপুর শরিয়তপুর শেষ করে নভেম্বরের মাঝামাঝি গোপালগঞ্জ সফর করি। আমাদের সফরের কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের উপর গোপালগঞ্জে ব্যাপক হামলার ঘটনা ঘটে এবং এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংসদের ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক সহ ২জন নিহত হয়।

সুতরাং আমরা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলাম। সবচেয়ে বড় সমস্যার ব্যাপার ছিল আমাদের এই কর্মসূচি এক ঘন্টা বা একদিনের ছিল না। আমাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল গোপালগঞ্জ জেলার অধীনস্থ উপজেলা গুলোর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করতে হবে। সুতরাং এটা ছিল চরম চ্যালেঞ্জিং এবং বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার বিশেষকরে টুঙ্গিপাড়া এবং কোটালিপাড়ায়।

আমরা গোপালগঞ্জ পৌছানোর পর ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সেক্রেটারি আমাকে বললো তোমার টেনশন নেওয়ার কিছু নাই, তুমি যদি মনেকর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে পোগ্রাম করা সম্ভব তাহলে করো আর না হলে ঢাকায় চলে আসো। ওদেরকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে প্রোগ্রাম করবা।তোমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া আছে।

রাতে আমি এবং আমার টিম সদস্যরা জেলার সাথে কথা বলে পোগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেই। এবং পরের দিন আমরা সদরের চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পোগ্রামের শিডিউল চুড়ান্ত করে। এখানে উল্লেখ্য গোপালগঞ্জ ঢোকার পর এটাকে আমার কোনভাবেই বাংলাদেশ মনেহয় নাই। প্রতিটি স্থানেই মুজিবের ভাস্কর্য, হাসিনা এবং হাসিনা পরিবারের সদস্যদের ব্যানার ফেস্টুন অক্ষত অবস্থায় ঝুলছিল।

ঐদিন রাতেই আমি জেলা ছাত্রদল এবং কলেজ ছাত্রদলকে সকল ব্যানার পোস্টার ফেস্টুন নামিয়ে ফেলার নির্দেশনা প্রধান করি।এবং ছাত্রদল রাতের মধ্যেই শহরের সকল ব্যানার পোস্টার ফেস্টুন নামিয়ে ফেলে। এবং পরের দিন আমরা কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই সরকারি কলেজ,মহিলা কলেজ একটি আলিয়া মাদ্রাসা এবং একটি কাওমি মাদ্রাসায় ব্যাপক উপস্থিতি সহ স্বাভাবিকভাবেই পোগ্রাম করি।

পরেরদিন আমরা কোটালীপাড়ায় পোগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেই এইখানে উল্লেখ্য কোটালীপাড়া হিন্দু সংখ্যাধিক্য এবং দূর্গম অঞ্চল। আমরা সকাল ১১টার দিকে কোটালীপাড়ায় পৌঁছাই এবং এখানেও আমরা ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পোগ্রাম করি।পোগ্রাম শেষ করে আমরা ছাত্রদলের প্রথম আহ্বায়ক কাজী আসাদ ভাইয়ের কবর জেয়ারত করি। আসার পথে একটি ছোট বাজারে আওয়ামী লীগের বাঁধার মুখে পড়ি, কিন্তু উপজেলা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের দৃঢ় ভূমিকায় কোন প্রকার বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া আমরা উপজেলা শহরে পৌঁছাই এবং রাতে আমরা কোটালীপাড়া বাজারে মিছিল এবং ধানের শীষের লিফলেট বিতরণ করি।

পরের দিন আমরা টুঙ্গিপাড়ায় পোগ্রাম করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। রাত সাড়ে দশটার দিকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিব ভাই কল করে টুঙ্গিপাড়া পোগ্রাম ক্যান্সেল করার নির্দেশনা প্রধান করে। রাকিব ভাই আমাকে বলে তোমাদের উপর হামলা করার জন্য আজকে টুঙ্গিপাড়া আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন একটি গোপন বৈঠক করেছে এবং তোমাদের উপর হামলার পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেছে। পরবর্তীতে এনএসআইয়ের পক্ষ থেকেও এই তথ্য আমাকে জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির নিষেধ এবং এনএসআইয়ের সতর্কতা স্বত্বেও আমি পরের দিন টুঙ্গিপাড়া পোগ্রাম করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি এবং যেই কোন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করি এবং উনারাও আমাকে আস্বস্ত করে।

পরের দিন সকালে আমি গোপালগঞ্জে জেলা ছাত্রদল এবং সকল উপজেলা নেতৃবৃন্দ সহ আমরা একসাথে টুঙ্গিপাড়া রওনা করি। এবং প্রথমেই আমরা হাসিনার বাড়ির পাশের ড. এমদাদুল হক মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজে পোগ্রাম করি এবং পরবর্তীতে আমরা টুঙ্গিপাড়া সরকারি কলেজে মতবিনিময় সভা, সমাবেশ এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করি।

টুঙ্গিপাড়া সরকারি কলেজ মাঠ পোগ্রামে আমি আমার বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলি ” যদি আজকে আমাদের উপর কোন প্রকার হামলার ঘটনা ঘটে তাহলে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গোপালগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিব, এবং সেই সক্ষমতা আমাদের আছে।এবং প্রায় ২২ বছর পরে আমরাই প্রথম টুঙ্গিপাড়ায় ওপেন মিছিল এবং সমাবেশ করি। এবং রাতে মোটামুটি কোন প্রকার বাঁধা ছাড়াই নিরাপদে সদরে ফিরে আসি।

পরের দিন আমরা কাসিয়ানী পোগ্রাম করি এবং রাতে মুকসুদপুরে রাত্রিযাপন করে পরেরদিন মুকসুদপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে পোগ্রাম করে ঢাকায় ফিরে আসি।